শিক্ষার্থীদের ভোটের আমানত রক্ষা করব: চবি’র ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য রনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পেছনের গল্প তুলে ধরে রনি জানান, সংগঠনটি সব সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও নামাজের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিত। এখান থেকেই তার সংগঠনের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ২০১০ সালে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব অসংখ্য কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান এই প্রার্থী। ২০১৩ সালে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তারও হন ।
ভিপি পদে প্রার্থী হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সংগঠনে নিজের ইচ্ছায় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে পরামর্শক্রমে যাকে উপযুক্ত মনে করা হয়, তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সূত্রে তাকে ভিপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নিজেদের প্যানেল প্রসঙ্গে ইব্রাহিম হোসেন রনি জানান, তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করেছেন। এতে পাঁচজন নারী ও একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রার্থী রয়েছেন। ছাত্রশিবির ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের শিক্ষার্থীকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি, যেন সব শিক্ষার্থী নিজেদের প্রতিনিধিত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।
ভিপির দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার পক্ষে কাজ করাই একজন ভিপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তার মতে, দায়িত্ব মানে কেবল উপভোগ নয়, এটি একটি আমানতও। তাই দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠা অপরিহার্য। আমরা শিক্ষার্থীদের ভোটের আমানত রক্ষা করব ইনশাআল্লাহ্।
ছাত্রশিবির প্রার্থী হয়ে কীভাবে ছাত্রদের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা করবেনÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন একটি সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে। নির্বাচিত হলে দল-মত নির্বিশেষে সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তার ভাষায়, আমরা কোনো দল বা সংগঠনকে সার্ভ করার জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রনি বলেন, অতীতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারতেন না, এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। তবে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন প্যানেলের নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিংয়ের শিকার হচ্ছেন। আমরা চাই তারা নির্দ্বিধায় নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
নির্বাচিত হলে তিনটি অগ্রাধিকারমূলক কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন এই ভিপি প্রার্থী। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার। দ্বিতীয়ত, আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। নতুন হল নির্মাণ এবং শতভাগ আবাসন নিশ্চিতে প্রশাসনের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা হবে। তৃতীয়ত, যাতায়াতব্যবস্থা উন্নয়ন। বিশেষ করে শাটল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধ, বগিসংখ্যা বৃদ্ধি। এছাড়াও যেসব এলাকার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেন সার্ভিস পান না, সেসব এলাকায় বাস চালুর জন্য কাজ করব।
শিক্ষা ও গবেষণায় চবি পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত ও গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তিনি আরো বলেন, এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের জন্য বড় ধরনের প্রণোদনা ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করব।
নির্বাচনি পরিবেশ প্রসঙ্গে তার মূল্যায়ন এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ রয়েছে। তবে কিছু শঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। রনি আশা প্রকাশ করেন, চাকসু নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে।
ডাকসু ও জাকসুর প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব নির্বাচনের প্রভাব চবিতেও পড়তে পারে। তবে এখানকার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি চিন্তাশীল। তারা ইশতেহার ও গত এক বছরের কার্যক্রম বিবেচনা করে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেবেন বলে আশা করেন তিনি।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই প্রেক্ষাপটে রনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এবার ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন তারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এবার সেই অধিকার ফিরে পাচ্ছে। সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছিÑভোটকেন্দ্রে আসুন, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: