মুষ্টির চালে রাস্তা নির্মাণ, দুই ইউএনওর কাঁচা রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৫ ২৩:০৫ পিএম
আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ১১:৪৬ পিএম

মুষ্টির চালে রাস্তা নির্মাণ,দুই ইউএনওর কাঁচা রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি

শামীম মিয়া, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি: গত ৫ বছর ধরে মুষ্টির চাল জমিয়ে সেই চালের টাকা দিয়ে এক কিলোমিটার মাটির কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী।রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মহেড়া ইউনিয়নের গবড়া গ্রামে।যুগযুগ ধরে অবহেলিত ও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলের দুর্ভোগের শেষ নেই গ্রাম বাসির।মানবিক ভাবেই গ্রাম বাসি এই কাঁচা রাস্তা নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছেন।

রাস্তা নির্মাণের খবর পেয়ে রবিবার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম ও দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ সেখানে যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার আগমনে ও রাস্তা পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি শুনে এলাকাবাসি খুবই খুশি হয়েছেন।

জানাগেছে জেলার মির্জাপুর,দেলদুয়ার ও বাসাইল এই তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম গবড়া।গবড়া গ্রামের পাশেই রয়েছে ভাতকুড়া, ডুবাইল,মহেড়া ও স্বল্পমহেড়া গ্রাম।এলাকা টি নিচু হওয়ায় এবং রাস্তা না থাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামবাসি।গত পাঁচ বছর ধরে সমাজবাসির মুষ্টির চাল প্রায় আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।আর গ্রামবাসি এক লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ শুরু করেন।গত এক মাসের ব্যবধানে গ্রামবাসি মিলে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগি করে তুলেন। গ্রামবাসি এখন রাস্তাটি পাকা করনের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।

আব্দুল হালিম,হাফিজ উদ্দিন ও কলেজ ছাত্র সামানসহ অন্তত ২০ জন গ্রামবাসি জানায়, গ্রামের একটি পাকা রাস্তার জন্য তারা যুগ যুগ ধরে স্থানীয় মেম্বার,চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের নিকট আবেদন করে আসছেন।রাস্তা নির্মানের জন্য স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও কোন বরাদ্ধ পাননি।শুনেছেন শুধু আশার বাণী।কাজ বলতে কিছুই হয়নি।গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে ও মাদ্রাসায় রাস্তার অভাবে ঠিকমত চলাচল করতে পারে না।শুকনো মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে হাটু পানি,কাঁদা এবং কোন কোন সময় কোমর পানি।বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকে পুরো এলাকা।গ্রামের কোন লোকজন অসুস্থ্য হলে এবং মহিলাদের বাচ্চার প্রসব ব্যথা হলে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কুলে ঢলে পরে।এভাবেই কেটে গেছে ৫৪ বছর। অবশেষে গ্রামবাসি মিলে উদ্যোগ নেওয়া হয় মুষ্টির চাল তুলে অন্তত রাস্তাটি তিন চার ফুট উচু করা।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুষ্টির চালে নির্মিত হচ্ছে গ্রামের কাঁচা রাস্তা এমন খবর ছড়িয়ে পরলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। রবিবার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম ও দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ অবহেলিত গবড়া গ্রামের এই কাঁচা রাস্তা পরিদর্শনে যান।এ সময় মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল সাজ রিজন,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.কহিনুর রহমান, দেলদুয়ার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.রওশন করিম এবং মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বিভাস সরকার নুপুর উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম ও দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান,গবড়া গ্রামাটি তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়েই অবহেলিত। স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানগন ও বিষয়টি প্রশাসনকে তেমন ভাবে বলেনি।আমরা এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি রাস্তাটি পাকা হওয়া খুবই জরুরী। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গবড়া গ্রামের রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।

এমএসএস

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর