বসুন্ধরা গ্রুপের ১৪৫৮ কোটি টাকার শেয়ার স্থগিতের নির্দেশ

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুদকের পক্ষে অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য সহকারী পরিচালক সাজিদ উর রহমান ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সাত সদস্যদের ৭০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ ডলার এবং ১৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যমানের ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
এতে আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান ও তার স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও তার স্ত্রী ইয়াশা সোবহানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ২১ নভেম্বর তারিখে তাদের নামে বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবর দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে স্লোভাকিয়া ও সাইপ্রাসে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে গ্রুপটি।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আইন না মেনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বিদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ, স্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেডিস, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য সিঙ্গাপুরে একাধিক কোম্পানিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাবিব ব্যাংক লি. এ অর্থ জমা, সাইপ্রাস এর ইউরো ব্যাংকে বিপুল অর্থ লেনদেন করার এবং সাইপ্রাসে বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে আবেদন আরো অভিযোগ করা হয়, এসব সম্পত্তি সরকারের অনুমতি ছাড়াই কেনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে বিদেশি পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব গ্রহণে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলে জানতে পেরেছে দুদক।
দুদক আবেদনে বলছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিদেশে পুঁজি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। তারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মূলধন স্থানান্তরের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। এমনকি তারা বিদেশে যে সব সম্পত্তি অর্জন করেছেন সেগুলোর তথ্য বা রেকর্ডপত্র, এনবিআর'র এর কাছে সংশ্লিষ্ট আয়কর বিবরণীতে প্রকাশ না করে তথ্য গোপন করেছেন। অভিযোগসংশ্লিষ্টরা অবৈধ উপায়ে সরকারি অনুমতি ছাড়াই বিদেশে অর্থ নিয়ে গিয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়, তারা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও বেহাত করার চেষ্টা করছেন। পাচার করা এসব অর্থ দিয়ে লেয়ারিংয় আশ্রয়ে সব দেশে সম্পদ কিনেছেন তারা। এসব কারণে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: