বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম, ডিম-মুরগি-সবজি বাজারে স্বস্তি

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:০৯ পিএম

ভোজ্যতেলের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বেড়েছে বোতলজাত ও খোলা তেলের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে সয়াবিন ও সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ টাকার মতো। এছাড়া চাল, ডিম, মুরগি, মাছ ও শাকসবজির দামে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম, ডিম-মুরগি-সবজি বাজারে স্বস্তি

ভোজ্যতেলের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বেড়েছে বোতলজাত ও খোলা তেলের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে সয়াবিন ও সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ টাকার মতো। এছাড়া চাল, ডিম, মুরগি, মাছ ও শাকসবজির দামে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের ইমামুদ্দিন বাবলু বলেন, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নেয়নি সরকার। সে কারণে বাজারে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তেলের দাম নতুন করে না বাড়লেও কমিশন কমিয়ে দিয়েছে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। সরবরাহ সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

তার মতে, কমিশন কমিয়ে তেলের দাম কার্যত চার থেকে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে আমরা সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৫ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম, কমিশন না দেওয়ায় আমাদের বোতলের গায়ের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লাভ থাকছে না।

মোশারফ হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেল নিয়ে নতুন করে নাটক শুরু করেছে। তেলের সংকটের কথা না বললেও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সমস্যা জটিল হওয়ার আগে এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সম্প্রতি লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয় বলে জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে বাজারে খোলা তেলের দাম বেড়ে গেছে।

খুচরাপর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকায় আর সুপার পাম অয়েলের লিটার ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। চারদিন আগেও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম অয়েলের লিটার ছিল ১৫০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলে কমিশন না দেওয়ায় গায়ের দাম প্রতি লিটার ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরা বাজারেও খোলা তেলের দাম বেড়েছে। কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন-চারদিনের ব্যবধানে প্রতি ড্রাম (২০৪ লিটার) খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। প্রতি ড্রাম খোলা সুপার পাম অয়েলের দাম ২৯ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার টাকা।

এদিকে, বোতলজাত তেলের দাম খুচরাপর্যায়ে না বাড়লেও পাইকারিতে বেড়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি কার্টনে (২০ লিটার) ৫০-৬০ টাকার মতো দাম বেড়েছে। কিন্তু গায়ের দাম বাড়ায়নি। ফলে বিনা লাভে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ৩ আগস্ট থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা, পাঁচ লিটার ৯২২ টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটার ১৫০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। সম্প্রতি লিটারে ১০ টাকা দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এদিকে, আগের সপ্তাহের তুলনায় মোটা চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা কমেছে। জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজী আবু ওসমান বলেন, মোটা চালের দাম কমলেও মাঝারি ও সরু জাতের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে মোটা স্বর্ণা গুটি ৫০-৫১ টাকা এবং পাইজাম ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে চাঁদপুর রাইস এজেন্সির মালিক বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও চলতি সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা এবং সোনালি কক ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হছে।

আব্দুল কাদের নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, আগের সপ্তাহের তুলনায় মাছের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। সব ধরনের মাছ কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে। মাস শেষের দিকে বাজার একটু নরম যায়, সেদিক থেকেও কমতে পারে বলে জানান তিনি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কমে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এছাড়া টমেটো ১০০ টাকা, করলা কিছুটা বেড়ে ৮০ টাকা, ৫০-৬০ টাকার ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, লাউ ৭০-৮০ টাকা এবং পেঁপের কেজি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে বর্তমানে কাঁকরোলের কেজি ৬০ টাকা, কচু প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির মতো দাম কমেছে আলুরও। বর্তমানে আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

ব্যবসায়ী ইমামুদ্দিন বাবলু বলেন, কিশমিশের দাম কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা, মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আলু বোখারা কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের পোলাও চাল কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর