আবরার হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল
আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ১১:২২ পিএম

ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হত্যার শিকার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
শনিবার ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনেরই মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে আর বহাল রয়েছে ৫ জনের যাবজ্জীবন। পর্যবেক্ষণে আবরারকে রাতভর পিটিয়ে মারার সময় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা কতটা নির্মম হলে চোখের সামনেই জীবন্ত ছেলেটিকে হত্যা করতে পারে এবং আবরারকে রক্ষায় কেহ এগিয়ে না আসায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আবরার ফাহাদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রাপ্ত আসামিরা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)। এর মাঝে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা মুনতাসির আল জেমি ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, আবরারকে হত্যার পর একই বছর ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তার বাবা বরকত উল্লাহ। একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। পরে এ মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এরপর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলাটির কাগজপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছালেও আওয়ামী লীগের পুরো সময় অজ্ঞাত কারণে তার পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো আসাদুজ্জামানের উদ্যোগে গত অক্টোবরে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানীর কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আবরারকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভোরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সময় আবরার কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরদিন ৬ অক্টোবর বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে বুয়েটের হলে ফেরেন।
ওই দিনই শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সভা করে বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রলীগ। খুন হওয়ার আগের দিন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: