মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায়

হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে গিয়ে যা বললেন নাহিদ

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:০৯ পিএম

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সারা দেশে যে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, তা ছিল পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ ইসলাম। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ মন্তব্য করেন।

জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলন ও সেই প্রেক্ষাপটে সংঘটিত সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে আংশিক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যা দেন এবং কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার ভাষায়, এই বক্তব্য সরকারের দমন-পীড়নের কার্যক্রমকে একটি ‘বৈধতা’ দিয়ে দেয়, যার মাধ্যমে আন্দোলনের ন্যায্যতা খাটো করার চেষ্টা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ওই বক্তব্যের পর সারা দেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত হয়ে রাতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করা হয়। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ছয়জনের শহিদ হওয়ার ঘটনার পরদিন ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলে হামলা চালানো হয়। একইদিন হলে থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দেয়ার পর সারা দেশে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। বিশেষ করে মাদরাসা ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকার বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ সারাদেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় এবং সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও হামলায় অংশ নেয়। এসময় বহু মানুষ শহিদ ও আহত হন।

তিনি আরো জানান, ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পর আন্দোলনকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়,সরকারের সঙ্গে আপোস না করলে দমন-পীড়ন আরো বাড়বে। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, তৎকালীন সরকার ছিল ফ্যাসিবাদি। তিনবার নির্বাচনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছে। তিনি দাবি করেন, ২০১৮ সালেই তাদের সন্দেহ হয়েছিল যে শেখ হাসিনা সরকার প্রকৃতপক্ষে কোটা সংস্কার বা বাতিল করতে চায়নি, বরং সময় সুযোগ বুঝে তা ফিরিয়ে আনতে চাইছিল।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর