'জুলাই সনদ বাস্তবায়নে এবার আলোচনায় ‘সংবিধান আদেশ’,

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০৯ পিএম

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদে যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, তখন সামনে এসেছে. সংবিধান আদেশের মাধ্যমে তা সমাধানের। তবে আইনজ্ঞ ডক্টর শাহদীন মালিক মনে করেন, বতর্মান সংবিধান অনুযায়ী, জুলাই বাস্তবায়নে আদেশ জারির সুযোগ নেই। এছাড়া এ নিয়ে আদেশ দেয়ার সুযোগ নেই আপিল বিভাগেরও। তবে, এর সঙ্গে দ্বিমত আছে কোনো-কোনো আইনজীবীর।

গণঅভ্যূত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ আদালতের মতামত নিয়ে ড. ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি।

এরপর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের লক্ষ্যে গঠন করা হয় হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৬ মাস ম্যারাথন আলোচনা পর তৈরি হয় জুলাই সনদ। যেখানে ১৬৬টি বিষয়ের মধ্যে ৮৪টিতে একমত রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও কোনো কোন ইস্যূতে রয়েছে নোট অব ডিসেন্টও। এর মধ্যে ১৯টি সংস্কার সরাসরি সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে জড়িত।

এমন প্রেক্ষিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংবিধান আদেশের মাধ্যমে জারি সনদ কার্যকর করা যায় এমন বিশেষজ্ঞ মতামতের পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। পরবর্তীতে আইনী সংকট এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের কথা বলা হয়েছে।

সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক জানান, বিদ্যমান সংবিধানে সংবিধান আদেশ জারির কথা উল্লেখ নেই।

আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে ‘সংবিধান আদেশ’ জারির কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন এমন কোনো নজির বা উল্লেখ সংবিধানের কোথাও পাওয়া যায় না।

এনিয়ে কথা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক কাজী মাফুজুল হক সুপনের সঙ্গে। তিনিও জানান, বিদ্যমান সংবিধানে নেই এমন সুযোগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, আমরা যে সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছি, তা জারি করবেন কে? যে জারি করবেন, তার সাংবিধানিক বৈধতা কোথা থেকে আসবে? এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তাই চেষ্টা থাকা উচিত যাতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ যতটা সম্ভব কম থাকে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকীর মত, দেশে এখন সংবিধান নেই, এই প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়েই তা চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, দেশে বর্তমানে কার্যকর সংবিধান নেই। তার ভাষায়, যদি সংবিধান কার্যকর থাকত, তবে ঐকমত্য কমিশন বসার প্রয়োজনই হতো না। জুলাইয়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর কার্যত সংবিধান অকার্যকর হয়ে গেছে। এখন নতুন সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি করার প্রয়োজন।

তবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেবার যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, কোর্ট তো কনসটিটিউশনের ওপর হাত দিতে পারবে না। কোর্ট আইন বানাতে পারে না, কনসটিটিউশন লিখতে পারে না এমনকি সরকার গঠন করে দিতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়া এক জিনিস, আর নতুন সাংবিধানিক আইন তৈরি করা আরেক জিনিস। আদালতের মতামত চাইলে সেটি অনেকটা সংবিধান প্রণয়নের কাছাকাছি চলে যাবে। এতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মত বিশ্লেষকদের।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর