গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী দুই জাহাজ ঘিরে ফেলেছে ইসরাইল
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১৪ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক জাহাজের বহর ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’-কে ঘিরে ফেলেছে ইসরাইলি নৌযান। গাজা উপকূলের কাছে এসে নৌযানগুলো “বিপজ্জনক ও ভীতিকর আচরণ” করছে বলে অভিযোগ করেছে ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (স্থানীয় সময় অনুসারে) যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ১১৮ মাইল দূরে অবস্থান করা সুমুদ ফ্লোটিলা জাহাজের বহরকে ডুবিয়ে দেওয়ার হুমকির পর এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। গাজা অভিমুখে এই মিশনের আয়োজকরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি দুটি “যুদ্ধজাহাজ” দ্রুত গতিতে এসে ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ বহরের দুই জাহাজ—আলমা এবং সিরিয়াস’কে ঘিরে ফেলে।
আয়োজক থিয়াগো আভিলার মতে, এই সময় বহরের সব ধরনের নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা অচলের এই ঘটনাকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর “সাইবার হামলা” বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক এই নৌবহরের কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় সচল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ইসরাইলের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এই নৌবহরে ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌকা ও জাহাজ রয়েছে। এসব নৌযানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০০ জন নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিয়ে ইসরাইলের অবরোধ ভাঙার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ফ্লোটিলা এগিয়ে যাচ্ছে।
নৌবহরটি গাজা উপকূলে নোঙর ঠেকাতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী টহল শুরু করেছে এবং বহরটিকে ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে। সুমুদ ফ্লোটিলা বহরটির বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরাইলের আগ্রাসী কার্যক্রম ৪০টিরও বেশি দেশের নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তবে এই আগ্রাসন সত্ত্বেও তারা গাজার উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
গত কয়েক দিনে গাজা অভিমুখী এই নৌবহর বেশ কয়েকবার ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। ড্রোনগুলো জাহাজের ওপর স্টান গ্রেনেড ও চুলকানি সৃষ্টিকারী গুঁড়া নিক্ষেপ করেছিল। এতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
ইসরাইল আগেই জানিয়েছে, ওই নৌবহরের গাজা উপকূলে যাত্রা ঠেকাতে তারা সম্ভাব্য যেকোনোও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে পিছপা হবে না। ইসরাইলের দাবি, উপকূলীয় এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলায় উপত্যকায় নৌ-অবরোধ বৈধ।
আয়োজকদের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি অধিকার বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, নৌবহর আটকানো হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ও সমুদ্র আইনের আরেকটি লঙ্ঘন হবে, কারণ গাজার জলসীমায় ইসরাইলের আইনি কোনো এখতিয়ার নেই।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল সেখানে নৌ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এরআগে বহুবার কর্মীরা সমুদ্রপথে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে।
২০১০ সালে এ ধরনের এক ঘটনায় ইসরাইলি সৈন্যরা ছয়টি জাহাজের নৌবহরে হামলা চালায়। এতে ৫০টি দেশের ৭০০ জন ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীর মধ্যে অন্তত ৯ জন নিহত হন।
চলতি বছরের জুনে ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন ‘‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের’’ উদ্যোগে গাজা অভিমুখী ছোট একটি জাহাজের বহর থেকে গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্তত ১১ জনকে আটক করে ইসরাইলি নৌবাহিনী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: