সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উৎস ফেসবুক: প্রেস সচিব

দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রায় সব সহিংসতার মূল উৎস হিসেবে ফেসবুককে দায়ী করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে শিল্পকলা একাডেমিতে সকল প্রাণের নিরাপত্তা (সপ্রাণ) কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি ফেসবুককে এ দায় দেন।
শফিকুল আলম বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ফেসবুক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। তারপর থেকে যতবড় বড় সহিংসতা আমরা দেখেছি -ভোলা, নাসিরনগর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জসহ প্রায় সব ঘটনার সূত্রপাত ফেসবুক। ফেসবুকে ছড়ানো গুজব বা ঘৃণাপূর্ণ পোস্ট থেকেই এসব ভায়োলেন্স হয়েছে। আমরা ফেসবুককে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে ফেলেছি। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারের নামে এই প্লাটফর্ম দিয়ে ঘৃণা ছড়ানো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া আজ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানাধরণের ফটো কার্ডের মাধ্যমে এটি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, অথচ ফেসবুক এই বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না, কোনো বিনিয়োগও করছে না। তারা কোটি কোটি ডলার আয়ের পরও বাংলাদেশের মতো দেশে ফ্যাক্ট চেকিং ও কনটেন্ট মডারেশনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত সীমিত উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এএফপি-কে তারা মাসে মাত্র নয়টি রিপোর্ট করার সুযোগ দেয়, অথচ প্রতিদিন দুই-তিন হাজার ভুয়া পোস্ট ভাইরাল হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় তারা ফ্যাক্ট চেকিং বন্ধ করে দিয়েছে, বাংলাদেশে মাত্র এক-দুটি থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান দিয়ে নামমাত্র কাজ চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে মিয়ানমারে ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়ানো ঘৃণা ও প্রোপাগান্ডার ফলেই রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর দায় থেকে ফেসবুককে মুক্ত বলা যায় না। ফেসবুক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর একটি মাধ্যম হয়েছিল।
ফেসবুকের দায় নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কেউ ফেসবুক বন্ধ করতে চাই না। কিন্তু তাদের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সংগঠিত হচ্ছে, তার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। পুলিশ সীমিত শক্তি নিয়ে মাঠে নামে, কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাশে না থাকলে সহিংসতা ঠেকানো কঠিন। পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলোতে স্থানীয় এমপি, ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতারা মাঠে নেমে এই ধরনের পরিস্থিতি সামলাতেন। কিন্তু ইন্টারিম সরকারের পলিটিক্যাল উইং না থাকায় সেই শূন্যতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গত দেড় দশকের তুলনায় বর্তমানে অবস্থা অনেক ভালো।
সরকার গত ১৪ মাসে দেশে আইনশৃঙ্খলায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে বাস্তবতার চেয়ে অতিরঞ্জন আছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদনগুলো মাঠের বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হয়, কিন্তু সেটার স্কেল অনেক সময় অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত হয়।
এ সময় শফিকুল আলম সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদের উপর নির্ভর না করে মাঠপর্যায়ে পুনর্মূল্যায়ন করে বাস্তব চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রভাষক সাইমি ওয়াদুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ড. সাইমুম পারভেজ, নূর খান লিটন, সারা হোসাইন, মাঞ্জুর আল মাতিন, মুশফিকুর রহমান জোহান প্রমুখ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: