উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের আভাস
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২:০১ পিএম

রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
চলতি সপ্তাহের শেষ বা আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের সূত্র ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিষদের পরিসর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি বেসামরিক বিমান, পর্যটন ও ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া দপ্তরে একজন নতুন মুখ আসতে পারেন। ফলে দু-তিনজন নতুন উপদেষ্টার যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানদের দপ্তরও পরিবর্তন হতে পারে।
তবে নাহিদ ইসলামের চলে যাওয়া ছাড়া অন্য কারো বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত ৬ মাসে প্রতিটি ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নিলেও সরকারের অনেক কাজে গতিহীনতার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নানা তৎপরতার বিপরীতে পদে পদে প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এজন্য একেকজন উপদেষ্টার দু-তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গও তোলা হয়।
জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় সরকারের কাজের গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বেশ কয়েকটি দল সরকারের কাজের শ্লথগতির অভিযোগ তোলে। এ সময় প্রয়োজনে পরিসর বাড়িয়ে হলেও সরকারের গতি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের রদদবল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, নাহিদ ইসলামের চলে যাওয়ার একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে পদত্যাগ না করার আগে কারো বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আর কেউ চলে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দপ্তর পুনর্বণ্টন হবে, রদবদল হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, উপদেষ্টা পরিষদে নতুন মুখের খোঁজে কয়েকজনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলেন এমন এক ব্যক্তির নাম জোরালো আলোচনায় রয়েছে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করলে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে।
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী দক্ষতাবিষয়ক বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্বপ্রাপ্ত ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার টেলিফোন আলাপসহ বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় সফলতা মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ভূমিকাকে সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হলেও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর পরিবর্তন শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে।
সূত্রমতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন তিনজন মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের হাল ধরছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি নিজেই ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের সঙ্গে যুক্ত হলে উপদেষ্টা পরিষদ ছেড়ে দেবেন। এক্ষেত্রে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে তার পদত্যাগের খবর আসতে পারে। চলতি মাসের শেষদিকে নতুন দল গঠন করবেন বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। তাদের দলের নাম চূড়ান্তকরণসহ দল গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলে তার মন্ত্রণালয় দুটির দায়িত্ব উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে দেওয়া হতে পারে। তিনি বর্তমানে দপ্তরবিহীন উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস সরকারে রয়েছেন। অবশ্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এসওএএস) বিশ্ববদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুশতাক খানের নামও শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় থাকা বিশেষ সহকারীদের থেকেও কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ড. আসিফ নজরুলের অধীনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। তার ওপর চাপ কমাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় তার অধীনে রেখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তখন ১৬ জন উপদেষ্টা নিয়ে যাত্রা শুরু করে সরকার। ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব ছিল প্রধান উপদেষ্টার হাতে। পরে দুই দফায় নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ ও রদবদল হয়। সব মিলিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে মোট সদস্যসংখ্যা ২৩ জন।
এর মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান, পর্যটন ও ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মারা যান। তার অধীনে থাকা ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে দেওয়া হয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের অধীনে রাখা হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: