চট্টগ্রামে অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর

মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নেতাকর্মীরা।
সোমবার সকালে মুরাদপুরে কর্মসূচি থেকে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ প্রধান সড়ক থেকে ছড়িয়ে পড়ে গলিপথে। মুরাদপুরের অন্তত তিনটি পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে দিনভর সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয়রা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর মুরাদপুর মোড়ে প্রথম সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই সময় জিইসিমোড়, একে খান গেইট, আন্দরকিল্লা, অক্সিজেন মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে ইসলামী ছাত্র সেনা ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নেতাকর্মীরা।
নগরীর মুরাদপুর এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে সড়কের একপাশে গিয়ে কর্মসূচি পালন করতে অনুরোধ করেন পুলিশ। এসময় পুলিশের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ায় আন্দোলরত নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে যানবাহনে ভাঙচুর করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় চারপাশ থেকে পুলিশের ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনরতরা। ইটের আঘাতে পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদে সোলাইমানসহ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ১৬ জনকে।
একপর্যায়ে মুরাদপুরের আশপাশের গলিপথে গিয়ে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিশেষ করে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কালিম মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়ক ও রেলপথে ফের অবরোধ করে সুন্নীরা। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তবে সুন্নী মাদ্রাসার সামনে থেকে আটকের সংখ্যা জানায়নি পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে কক্সবাজারগামী ট্রেনসহ দুটি ট্রেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে পড়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট স্টেশনে। বেলা তিনটার দিকে ট্রেন দুটি গন্তব্যে ছেড়ে যায়। সংঘর্ষের কারণে মুরাদপুর ও অক্সিজেন দিনভর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে গোটা নগরীতে চরম দুর্ভোগ পোহান সাধারণ মানুষ।
সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম জানান, ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে। মুরাদপুর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনরতদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা বহদ্দারহাটের দিকে গিয়ে আরো বড় পরিসরে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। দিনভর চলা সংঘর্ষে কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তারা সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নগরী ছাড়াও বাঁশখালী উপজেলার গুণাগরী চৌমুহনী এলাকায় আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পটিয়া উপজেলার কাগজিপাড়া ও শান্তির হাট এলাকায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে সীতাকুণ্ডের বগুলা বাজার, কদমরসুল, ভাটিয়ারী এলাকায় সর্বস্তরের সুন্নি জনতার ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আহলে সুন্নত আল জামাআত ও ছাত্রসেনার নেতা-কর্মীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, গাজীপুরে তাদের নেতা মাওলানা রইস উদ্দিনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের আট দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করেনি। তাই বাধ্য হয়ে সুন্নী জনতা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি জানান তারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: