সংবিধান সংশোধন করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে: গোলাম পরওয়ার

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:০৯ পিএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৮:৪৪ পিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণ শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। তারা আর আগের শাসনে ফিরে যেতে চায়না। তার প্রমাণ হলো সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন। অতীতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুম কালচারের নামে

তিনি বলেন, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী সনি ও আবরার হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যা এরকম দেশ স্বাধীনের পর থেকে শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী তার নিজ ক্যাম্পাসে হত্যার শিকার হয়েছে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে লেজুড়বৃত্তিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটিয়েছে। দেশের মানুষ আজ সচেতন। কিসে তাদের ভালো আর কিসে তাদের মন্দ জনগণ আজ তা ভালো করেই বোঝে। তাইতো জনগণ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিরব ব্যালট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের পুরোনো শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন জনকল্যাণমুখী, কল্যাণকর বাংলাদেশ বিনির্মাণের।

গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণ এখন আর কর্তৃত্ববাদী শাসন পছন্দ করেনা। ফ্যাসিবাদী সরকার অব্যাহত খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি, সন্ত্রাসী, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের মাধ্যমে এদেশের ভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষের উপর জেঁকে বসেছিল। জনগণ ভেবেছিল এ অবস্থা হতে আর মনে হয় পরিত্রাণ পাবে না। কিন্তু বান্দাহর কোন ইচ্ছাই পূর্ণ হয়না মহান আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন। তাইতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে এক দুর্দান্ত প্রতাপশালী ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, এখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জনগণ তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে। এ কারণেই জনগণ এখন অনুরূপ কোন শাসন ব্যবস্থাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে চায়না। আসতে চাইলে সেটিকে তারা লালকার্ড দেখাবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করে বলেছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সংবিধানের কারণে একটা সরকার এত প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিল, এত মানুষকে হত্যা করেছে, এত মানুষকে আহত করেছে, জুলাই সনদের লিখিত স্বীকৃতির মাধ্যমে সেই সংবিধানের ন্যূনতম সংশোধন এনে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে এই সংবিধানের আলোকে আবার যদি নির্বাচন হয় তাহলে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদের আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ হয়ে উঠার সুযোগ থেকে যাবে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করতে হবে, পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। তাহলে আমরা সবাই মিলে জুলাই আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারবো।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবক সমন্বিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মুক্তার হোসেনের সভাপতি বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমীর গাজী সাইফুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা সভাপতি ইউসুফ ফকির, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল। স্বাগত বক্তৃতা করেন কলেজ অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরদার। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি শেখ মোসলেম উদ্দিন, অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন সেখ, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা ফরহাদ হোসেন, ছাত্র শিবির নেতা হুসাইন আহমদ, আবু তাহের, সামিদুল হাসান লিমন, মফিজুর রহমান প্রমুখ।

এর পূর্বে সোনা বিরাজ মুই মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত অনুরূপ এক মতবিনিময় সভা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি শেখ মোসলেম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। স্বাগত বক্তৃতা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাইকেল মল্লিক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিক্ষক প্রসেন ঢালি। এ সময় প্রধান অতিথি কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট পুরস্কার তুলে দেন। সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সকাল দশটায় আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম শোভনা মাদরাসায় ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করেন। মাদরাসা কমিটি সভাপতি নওশের আলী বাগতীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার স্বাগত বক্তৃতা করেন মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মো. জাকারিয়া। বক্তৃতা করেন আব্দুল হামিদ, শেখ মোসলিম উদ্দিন প্রমুখ। সকাল আটটায় স্বপ্না গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং ৯ টায় চিংড়া ট্রলার ঘাটে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তৃতা করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এদিকে রাত ৮টায় ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডে পঠিয়াবান্ধা পূজা মন্ডপ চত্বরে হিন্দু কমিটির উদ্যোগে ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল। হিন্দু শাখার সভাপতি নারায়ণ মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা। সাধারণ সম্পাদক অসিত কুমারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ড. আজিজুল হক, শেখ মো. আলাউদ্দিন, জামিরা ইউনিয়ন আমীর মো. শরিফুল ইসলাম, সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শনিবার রাতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনায় চিকিৎসাধীন খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, মানবজমিনের সাংবাদিক গাজী মাকুল উদ্দিনের মাতা এবং খুলনার বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডুমুরিয়া উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামকে দেখতে যান। হাসপাতালে তিনি অসুস্থদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির প্রমুখ।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর