জুলাই সনদের আইনিভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:০৯ পিএম

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি। এই সনদটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে, এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যদি সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি করে, তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, তৎকালীন সময়ে দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে, যা ছিল আদালতের রায়ে প্রভাবিত একটি সিদ্ধান্ত। তাই, বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ৪টি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এ আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, অতীতে ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে গণভোট হয়েছিল, সেটি ছিল নির্বাচন পরবর্তী একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী সরকার এসেছে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে এই বিতর্কের মধ্যে জড়ানো উচিত নয়, কারণ এতে আদালত প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং দেশের জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়।

হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, কারণ জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি ডাকসু নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর বিপুল ভোটে জয়লাভের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটি প্রমাণ করে যে এদেশের তরুণ সমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সবশেষে তিনি বলেন, যদি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া হয়, তবে জনগণ দেশের স্বার্থে, নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এই সনদের পক্ষেই রায় দেবে।

তিন বলেন, জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে না থাকে, তবে আমরা সেই রায়ও মেনে নেবো।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর