প্রত্যাশা ক্রমেই বাড়ছে জামায়াতে ইসলামীর

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:১২ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যাশা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনি প্রচারে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছেন দলটির প্রার্থীরা। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে দীর্ঘ ১৭ বছর পর এবার ভোটের ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন বাংলাদেশ তথা ন্যায়-ইনসাফের একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দাঁড়িপাল্লার প্রার্থীরা।

জামায়াত সূত্র জানায়, দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছেন তারা। সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে আগামী নির্বাচনে নীরব ভোট বিপ্লবের আশা করছে জামায়াত। বিশেষ করে নারী, তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ শ্রমজীবীর অনেকেই এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সবশেষ ২০০৮ সালে বিতর্কিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দুই প্রার্থীর বিজয়সহ বিগত বিভিন্ন সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল জামায়াতে ইসলামীর। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনেরও অংশীদার হয় দলটি। তবে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের আগ পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় থেকে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত নির্মূলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম-খুনের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দেয় হাসিনা সরকার। এমনকি পতনের আগে দলটি নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিল তারা। চরম প্রতিকূল ওই পরিস্থিতিতে তাদের দলীয় কার্যক্রম বেশ বিঘ্ন হয়।

তবে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে অনুকূল পরিবেশ ফিরে পায় জামায়াত। নির্বিঘ্নে দলীয় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আগামী নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষের কাছেও যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে ভোটের মাঠে জামায়াতের প্রতি জনসমর্থনের চিত্রও ব্যাপক পাল্টে গেছে।

সাম্প্রতিক বেসরকারি বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আগের চেয়ে জামায়াতের ভোট-সমর্থন তিনগুণের বেশি বেড়েছে। বাস্তব চিত্র আরো ইতিবাচক এবং ক্রমেই জনসমর্থন বাড়ছে বলে মনে করছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। তাছাড়া বিভিন্ন ইসলামি ও সমমনা দলের সঙ্গে যে আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে, তা বাস্তবায়ন হলে ভোটের হার অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের তরুণ-যুবকদের বিরাট একটি অংশ দলটির পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে। সম্প্রতি চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আগের গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে পরিবর্তনের পক্ষে তরুণ সমাজের রায় প্রকাশ পেয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও দাঁড়িপাল্লার পক্ষে জনগণের এ ধরনের নীরব বিপ্লব ঘটবে এবং জামায়াত আগামীতে সরকার গঠনের সুযোগ পাবে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তরুণ শিক্ষার্থীরা একটি আদর্শবাদী দলকে সমর্থন দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে এমন আরেকটি মিরাকল হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ জয়ের যে রিফ্লেকশন, এটা আগামীতেও হবে। আমরা এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াতের প্রার্থী ও নেতাদের গণসংযোগকালে সাধারণ মানুষ দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন। আগে যারা অন্য দলে ভোট দিয়েছেন বা সমর্থন করতেন, তারাও এবার জামায়াতকে সমর্থন দিতে চান। এর কারণ হিসেবে ভোটাররা বলছেন, বিগত দিনে লাঙ্গল, ধানের শীষ ও নৌকা মার্কার সরকার দেখেছেন; এবার তারা জামায়াতের সরকার দেখতে চান। তাছাড়া যোগ্যতা ও সততার দিক বিবেচনায় জামায়াত প্রার্থীদের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়ছে। নানা কৌশলগত কারণে নতুন ভোটারদের অনেকেই তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তারাও নীরবে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা এমন অভিজ্ঞতার কথাই জানিয়েছেন।

জামায়াতের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লবের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সারা দেশে নারী-পুরুষ-শ্রমিক ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সাড়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বিগত দিনের বস্তাপচা রাজনীতি আর দেখতে চায় না। তারা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় এবং এ ক্ষেত্রে জামায়াতকে কেন্দ্র করেই তাদের আস্থা ও ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। দিন দিন সেটা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সরকার দেখেছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিতেও একটি দলের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, খুন-ধর্ষণ দেখছে। তারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিমুক্ত একটি দেশ দেখতে চায়। নতুন কিছু করতে হলে জামায়াতকে দিয়েই সম্ভব। এজন্য জনগণ এবার জামায়াতকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ আমরা পতিত আওয়ামী জুলুম-নির্যাতনের পরও ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন হলে এবার জামায়াতের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব হবে বলে আশা করছেন এই নেতা।

এদিকে দেশের ভোটারদের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের কাছে দাঁড়িপাল্লার দাওয়াত পৌঁছে দিতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন জামায়াতের মহিলা বিভাগের নেতাকর্মীরা। নিয়মিত সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকের পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডও চালাচ্ছেন তারা। এ সময় নারীদের অনেকেই এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলে জানান নেতারা।

এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, নারী ভোটারদের কাছে জামায়াত প্রার্থীদের দাওয়াত পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। দলের কেন্দ্র ও মহানগরী ঘোষিত নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ নারীদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের গণসংযোগের অংশ হিসেবে সারা দেশে উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সে সঙ্গে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে রাজধানীসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ও সাড়া লক্ষ করা গেছে।

মাঠ পর্যায়ের চিত্র তুলে ধরে জামায়াতের মহিলা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল নেত্রী জানান, সাধারণের মাঝে বিগত সময় ক্ষমতায় আসা দলগুলোর বিকল্প হিসেবে এবার জামায়াতে ইসলামীকেই বেছে নিতে চান নারী ভোটাররা। দলটির কর্মীরা সাধারণ নারীদের কাছে এ স্লোগান পৌঁছে দিচ্ছেন ‘সব দল দেখা শেষ, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ’। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভালো ফলাফলের স্বপ্ন দেখছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর