এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯.১৭ শতাংশ

বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপের পর মূল্যস্ফীতি আরও কমে এপ্রিলে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছিল। তবে সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের দামে স্বস্তি এলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামে অস্বস্তি রয়ে গেছে। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব
মূল্যস্ফীতির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসেও মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশে দঁাড়িয়েছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনও ৯ দশমিক ৬১ শতাংশে রয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের অস্বস্তি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশের অর্থ হলো আগের অর্থবছরের এপ্রিলে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, এ বছরের এপ্রিলে তা কিনতে হয়েছিল ১০৯ টাকা ১৭ পয়সায়। মূল্যস্ফীতি এক ধরনের করের মতো। ধরা যাক, আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়–চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।
বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরও বেশি। গরিব মানুষেরা তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে।
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে গড় মূল্যস্ফীতিতে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের কেনাকাটায় খরচ করতে হয়েছে বেশি। এপ্রিলে গ্রাম এলাকায় মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে একই সময়ে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশে ছিল। আগের মাস মার্চে গ্রাম এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল, শহর এলাকায় তা ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
গত এক বছরের (মে ২০২৪- এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত) গড় মূল্যস্ফীতি শতকরা ১০ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী একই সময়ে (মে ২০২৩- এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত) গড় মূল্যস্ফীতি ছিল শতকরা ৯.৭৩ ভাগ।
উল্লেখ্য, সারা দেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাট-বাজার থেকে নির্ধারিত সময়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এপ্রিল ২০২৫ মাসের সিপিআই প্রস্তুত করে বিবিএস। এপ্রিল মাসে জাতীয় পর্যায়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি নিরূপিত হয়েছে শতকরা ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। বিবিএসের আওতায় ন্যাশনাল একাউন্টিং উইং প্রতিমাসে মাঠ পর্যায়ে সারা দেশের ৬৪টি জেলা হতে নির্ধারিত দরছকের মাধ্যমে প্রায় ৬৩ ধরণের মজুরি সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক তা প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ ও যথাযথ যাচাই করে মজুরি হার সূচক এবং এর শতকরা হার প্রণয়ন করা হয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল; যা ছিল ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে শীত মৌসুমে বাজারে শাক-সবজি, ডিম, পেঁয়াজসহ অন্য সব পণ্যের দাম কমায় গত কয়েক মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমছে। সবশেষ গত এপ্রিলে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
এর পরও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে ‘লাল’ শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশ। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণিতে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেট (মার্চ, ২০২৫)’ প্রতিবেদনে এই চিত্র ওঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বব্যাংক ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ লাল শ্রেণিতে আছে। দেশগুলো হলো কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, ভারত, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: