আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা: চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষা

বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায় কার্যকর করতে দেশের সর্ব্বোচ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। আপিল বিভাগেই ভাগ্য নির্ধারণ হবে আসামিদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিল বিভাগে আসামিদের সাজা কমানোর বিষয়ে শুনানিতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরবো। আশাকরি সর্ব্বোচ আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে। আপিল বিভাগের রায়ের পর সাজা কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক এখনও প্রস্তুত হয়নি। পেপারবুক প্রস্তুত হলে ক্রম অনুযায়ী আপিল শুনানি শুরু হবে।
এর আগে গত ১৬ মার্চ বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় অপরিবর্তিত রেখে সব আসামির (২০ জন) মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৫ জনের যাবজ্জীবনের আদেশও বহাল রাখা হয়।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
এর আগে আজ বেলা ১১টায় এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা শুরু হয়। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান রায় পাঠ করে শোনান।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
গত বছরের অক্টোবর মাসে এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ উদ্যোগ নেন।
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। এরপর আসামিরা দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল করেন। (ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। দণ্ডিত আসামিরা উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আপিল এবং জেল আপিল করতে পারেন)
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: