শাপলা প্রতীক নিয়ে ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনসিপি’র

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে নতুন একটি বিতর্কের জন্ম হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের পছন্দের নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা’ চেয়ে ইসির কাছে আবেদন করলেও তা নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এনসিপি’র অভিযোগ, কমিশন বিভিন্ন সময়ে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে এবং কোনো সুস্পষ্ট আইনি কারণ ছাড়াই শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে। এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে ইসির সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরে।
চিঠিতে এনসিপি জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে তারা নিয়মিতভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। এনসিপি’র একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুনে নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়, যিনি তাদের আশ্বস্ত করেন যে, ইসির নতুন খসড়া তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকবে। এই আশ্বাসের পর এনসিপি গত ২২ জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে এবং একই সঙ্গে তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ সংরক্ষণের অনুরোধ জানায়।
দলটি জানায়, এনসিপি’র আবেদনের পর হঠাৎই গত ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, নির্বাচন কমিশন ‘শাপলা’ প্রতীককে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শাপলা’ যেহেতু বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক, তাই এটি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে না। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এনসিপি গত ১৩ জুলাই নির্বাচন কমিশনে একটি লিখিত আবেদন জমা দেয়। আবেদনে তারা যুক্তি দেয় যে, ইসির এই ব্যাখ্যা আইনিভাবে সঠিক নয়। দলটি ইসিকে দেখায়, জাতীয় প্রতীক হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট নকশা, যা শাপলা ফুল, ধানের শীষ, পাট পাতা এবং তারকা সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে ‘ধানের শীষ’ এবং ‘তারা’ প্রতীক দুটি ইতোমধ্যেই যথাক্রমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (জেএসডি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’ ও ‘সোনালি আঁশ” (যা পাটকে নির্দেশ করে) যথাক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং তৃণমূল বিএনপিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এনসিপি জোর দিয়ে বলে, যদি জাতীয় প্রতীকের উপাদানগুলো পৃথকভাবে বরাদ্দ দেওয়া যায়, তাহলে ‘শাপলা’ বরাদ্দ দিতেও কোনো আইনি বাধা নেই।
ইসিকে এনসিপি জানায়, এই বিতর্কের মধ্যে গত ৩ আগস্টের এক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডিজিএফআইসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় সংস্থার লোগোতে শাপলা থাকায় এটি এনসিপিকে দেওয়া যাবে না। এনসিপি তাৎক্ষণিকভাবে এই যুক্তির প্রতিবাদ জানায়। তারা ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে বাংলাদেশ পুলিশের লোগোতে ধানের শীষ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর লোগোতে ঈগল এবং সুপ্রিম কোর্টের লোগোতে দাঁড়িপাল্লা থাকলেও ইসি অতীতে যথাক্রমে বিএনপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে এই প্রতীকগুলো বরাদ্দ দিয়েছে।
এনসিপি’র অভিযোগ, শুধুমাত্র ডিজিএফআই এর লোগোর সঙ্গে সামান্য মিল থাকার কারণে তাদের শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়াটা বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী। তারা মনে করে, ইসির এই মনোভাব তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে এবং এর পেছনে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের তৎপরতা রয়েছে।
চিঠিতে এনসিপি আরও জানায়, সম্প্রতি, মাঠ পর্যায়ের যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের পছন্দের প্রতীক ‘শাপলা’ বরাদ্দ না দেওয়ার ব্যাপারে অনড় রয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর ইসির সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এনসিপি এই সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে।
এনসিপি এখন আশা করছে যে, নির্বাচন কমিশন তাদের আগের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ত্যাগ করবে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তাদের পছন্দের প্রতীক—শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলা— এর যেকোনো একটি বরাদ্দ দেবে। এনসিপি মনে করে, ইসির এই সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার আগ্রহের প্রতিফলন হওয়া উচিত।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: