টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আস্তানা। অস্ত্রসহ ৩ পাচারকারী আটক, উদ্ধার ৮৪ ভুক্তভোগী।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:০৯ পিএম

হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ: টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচারকারি চক্রের অসংখ্য আস্তানার সন্ধান মিলেছে। এ সব আস্তানায় টানা ১২ ঘন্টার অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ পাচারকারি চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে পাচারের জন্য আটকে রাখা ৮৪ জনকে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা ১২ ঘন্টাব্যাপী টেকনাফের কয়েকটি পাহাড়ে যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টেকনাফ ২ বিজিবির দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান ও র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান এসব তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
এ অভিযানে আটকরা হলেন, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার আব্দুল্লাহ (২১), রাজরছড়ার সাইফুল ইসলাম (২০) ও মো. ইব্রাহিম (২০)। আটকরা মানবপাচারকারি আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। এই চক্রের আরও ৯ জনকে শনাক্তের তথ্য জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
পলাতক থাকা চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন, বাহারছড়া ইউনিয়নের মৃত মীর কাসেমের ছেলে রেজাউল করিম (৩৭), মমতাজ সওদাগরের ছেলে আয়াতুল তনজিদ (৩০), রোহিঙ্গা তুফান, আব্দুল আলীম, জাকির, হাবিবছড়ার এলাকার রশিদ মেম্বার, কচ্ছপিয়া এলাকার মজিব (৩০), জয়নাল (২৫), আব্দুল মজিদ (২০)।
অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১টি বিদেশী পিস্তলের গুলি, ১টি একনলা বন্দুক, ১টি একনলা বন্দুকের গুলি, ১টি ওয়ানগান শুটার, ১টি ওয়ানগান শুটারের গুলি, ২টি দেশী রামদা ও ১ টি চাকু।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, ‘টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়ায় গহীন পাহাড়ে একটি পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগীকে আটক রাখার খবরে রবিবার সন্ধ্যার পর বিজিবি ও র্যার সদস্যরা প্রথমে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে একজন পাচারকারীকে আটকসহ চার ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের লোমহর্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভিত্তিতে পাহাড়ে বৃহৎ যৌথ অভিযান পরিচালনা করি। এতে আলাদাভাবে পাচারকারীদের তিনটি পাহাড়ি আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে পাচারের জন্য জড়ো করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ বিজিবি ও র্যাবের ১২ ঘন্টার দুঃসাহসিক অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে টেকনাফে পাহাড়ি মানব পাচারের বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয়, ফলে আমরা টহল-নজরদারীর মাধ্যমে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা কয়েকটি পাহাড়ে মানবপাচার চক্রের আস্তানায় হানা দিয়ে সমুদ্রপথে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশে জড়ো করা ৮৪ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তাদের মধ্যে যেমন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত হোসেন, সাইফুল ও নিজাম নামের তিন ব্যক্তি এই আন্তর্জাতিক চক্রের মূলহোতা। তাদের অধীনে রয়েছে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত দালালদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ক্যাম্পের চক্রও জড়িত রয়েছে। তাদের আমরা ধরতে কাজ করছি।
LIMON
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: